মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান

মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান সমূহ

মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে প্রতিটি মুসলিমের অন্তর থাকে অধির আগ্রহে। নবী-রাসূলদের পদচারনায় মুখরিত স্থানসমূহ, তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং তাদের বসবাসের স্থান সমূহ নিজের চোখে দেখার ইচ্ছা প্রায় সকলেরই। এ কারনে অনেকেই হজ্জ ও ওমরা পালন করে থাকেন এবং একই সাথে মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান সমূহ ভ্রমন করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

আমরা যারা ওমরা বা হজ্জ পালনের পর মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান সমূহ ভ্রমণ করতে আগ্রহী বা এমনিতেই মক্কা ও মদীনা নগরী ভ্রমণে আগ্রহী–তাদের জন্য প্রয়োজন এ সকল স্থানের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে সচ্চ ধারণা থাকা। যা তার ভ্রমণকে করবে আরো বেশি প্রশান্তিদায়ক। এই ব্লগে আলোচিত হলো মক্কা ও মদীনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

মক্কা ও মদীনা নগরী

এক নজরে মক্কা ও মদীনা নগরী

মক্কা ও মদীনা বর্তমানে সৌদি আরবের দুটি প্রসিদ্ধ শহর। মসজিদুল হারাম, মসজিদুন নববি এ দুই শহরের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া নবী ও রাসূলদের পদধূলিতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই এ নগরী ধারণ করে আছে এক সমৃদ্ধশালী ইতিহাস। সর্বপ্রথম নবী আদম আ. থেকে শুরু করে অসংখ্য নবীর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সা. এর পদচারনায় মুখরিত ছিল এই নগরী।

রাসূল সা. এর জন্ম থেকে শুরু করে ৫৩ বছর অতিবাহিত করেছেন এই মক্কায় এবং জীবনের বাকি ১০ বছর পার করেছেন প্রশান্তিময় শহর মদিনাতে। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা কালের সাক্ষী হয়ে আছে আজও, যার ফলে বর্তমান সময়ের মানুষের জন্য মক্কা ও মদীনা এখন আবির্ভূত হয়েছে নানা রকম দর্শনীয় স্থানের সাক্ষী হয়ে।

সমৃদ্ধ নগরী মক্কার দর্শনীয় স্থান সমূহ

মক্কা নগরীর ইতিহাস শুরু হয়েছে সৃষ্টির সূচনা থেকেই। তাই এই নগরী ধারণ করে আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের, নিচে মক্কা নগরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের নাম উল্লেখ করা হলো:

মসজিদ আল-হারাম

মসজিদুল হারাম মক্কা নগরীতে অবস্থিত একটি মসজিদ, যা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা। মসজিদটি বড় মসজিদ নামেও পরিচিত। এ মসজিদটি মুসলিমদের হজ্জ যাত্রাকালীন সফরের একটি স্থান, যা প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের জন্য জীবনে কমপক্ষে একবার পালনীয়। এখানে হজ্জ ও উমরাহ পালনকারীরা তাওয়াফ করে থাকেন।

হজ্জ পালনের স্থান সমূহ

হজ্জ ও উমরাহ পালনের সময় হাজীরা মক্কার কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ এবং অবস্থান করে থাকেন, যেমন:

  • মিনা প্রান্তর
  • আরাফার ময়দান
  • জামারাত, মুজদালিফা
  • সাফা ও মারওয়া ইত্যাদি।

মক্কা লাইব্রেরি

মক্কার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, রাসূল সা.-এর জন্মস্থান–যা বর্তমানে মক্কা লাইব্রেরি হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাজী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।

জিন মসজিদ

মসজিদটিকে মক্কার প্রাচীনতম মসজিদগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলির মধ্যে একটি। মসজিদটি এমন জায়গায় নির্মিত হয়েছে যেখানে বলা হয় যে জিনদের একটি দল এক রাতে মুহাম্মদ সা. এর কুরআনের একটি অংশের তিলাওয়াত শোনার জন্য জড়ো হয়েছিল। পরে রাসূল সা. এই জিনের নেতাদের সাথে সেখানে দেখা করেন এবং পরে জিনদের দল ইসলাম গ্রহণ করেন।

মুয়াল্লা কবরস্থান

এটিও মক্কার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে একটি। এটি সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত একটি কবরস্থান। এটি মসজিদুল হারামের অল্প দূরে অবস্থিত। এখানে মুহাম্মাদ সা.এর স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, দাদা ও অন্যান্য পূর্বপুরুষদের কবর রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কিছু মসজিদ ও পাহাড়

মক্কা নগরীতে দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ ও পাহাড়, সেসব মসজিদ ও পাহাড়ের সাথে জড়িয়ে আছে গভীর ইতিহাস, যেমন: খাইফ মসজিদ, নামিরা মসজিদ, বিল্লাল মসজিদ, জাবালে সাওর, জাবালে নুর, আবু কুবাইস পাহাড় ইত্যাদি।

কিসওয়াহ

কিসওয়াহ হচ্ছে কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা। এটিও বহিরাগতদের জন্য উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। হজ্জ ও উমরাহ পালন শেষে অনেকেই এখানে আসেন কাবা ঘরের গিলাফ তৈরি দেখার জন্য।

মক্কা ইসলামি জাদুঘর

মক্কা জাদুঘর হলো, কাবা শরিফ ও মসজিদে নববীর বর্তমান রূপের আগে বিশেষ করে তুর্কি আমলের ব্যবহৃত জিনিপত্রের সংরক্ষণাগার। জাদুঘরে প্রবেশের মুখে রাখা হয়েছে ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সৌদি সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেমন হবে মসজিদে হারাম ও মক্কার অবয়ব- তার একটি রেপ্লিকা। এটিও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

প্রশান্তির পুণ্যভূমি মদীনার দর্শনীয় স্থান সমূহ

রাসূল সা. এর হিজরতের পর তৎকালীন ইয়াসরিব পরিবর্তিত হয়ে মদীনায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে মদীনা হয়ে ওঠে পৃথিবীর এক পরাশক্তিতে, এবং ইসলামের জন্য তৈরি হয় এক শক্তিশালী ঘাটিতে, যার ফলে এ স্থানেও রাসূলের নানা স্মৃতির রোমন্থনে রয়ে গেছে নানা দর্শনীয় স্থান। যেমন:

মসজিদে নববি

মসজিদে নববি, যা বর্তমান সৌদি আরবের মদীনায় অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববির স্থান। মুহাম্মদ সা. হিজরত করে মদীনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। মদীনার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে সবার আগে আসে মসজিদে নববি।

কুরআন মিউজিয়াম

মদিনার স্থানীয় মুসলমানরা ছাড়াও সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হজ্জ-উমরাহ পালনকারীদের কাছে মসজিদের নববীর আঙিনায় কুরআন জাদুঘর একটি সুপরিচিত নাম। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় কুরআনে কারিমের সঙ্গে গভীর ভালোবাসা স্থাপনের লক্ষে মদিনার গভর্নর ড. ফায়সাল বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আন্তরিক সহযোগিতায় এটি নির্মিত হয়।

রাসূল সা. এর রওজা

মদিনায় সকল মুসলিমদের প্রধান আগ্রহ থাকে রাসূল সা. এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা। তাই মদিনার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে এক নাম্বারে থাকে এটি।

জান্নাতুল বাকি কবরস্থান

এই কবরস্থানটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মুহাম্মাদ সা. এর অনেক আত্মীয় ও সাহাবিকে দাফন করা হয়েছে। মুহাম্মাদ সা. এই কবরস্থানে বেশ কয়েকবার এসেছেন। জান্নাতুল বাকির পেছনে একসময় একটি ইহুদি কবরস্থান ছিল। পরবর্তীতে উমাইয়া আমলে তা জান্নাতুল বাকির অংশে পরিণত করা হয়। এটিও মদিনার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম।

কুবা মসজিদ

মসজিদে কুবা বা কুবা মসজিদ মদীনায় অবস্থিত। এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের পর মুহাম্মাদ সা. এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। ফজিলত ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে কুবার অবস্থান ৪র্থ। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কুবার স্থান।

উহুদ পাহাড়

উহুদ সৌদি আরবের মদীনায় অবস্থিত একটু উল্লেখযোগ্য পর্বত, যার সাথে ইসলামের অনেক ইতিহাস জড়িত। এখানেই কাফির-মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়েছিল। তখন থেকেই এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

মসজিদে কিবলাতাইন

মসজিদ আল কিবলাতাইন মদীনায় অবস্থিত একটি মসজিদ। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মাদ সা. এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে। এরপর তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও জেরুজালেম থেকে মক্কার দিকে ফিরে যায়। এ ঘটনা থেকে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। তখন থেকে মসজিদটি সকলের নিকট গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

সারসংক্ষেপ

মক্কা ও মদীনা মুসলিমদের কাছে সবসময়ের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। উপরে আলোচিত মক্কা ও মদীনার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের পরিচয় আমরা জেনেছি, যেগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে আমাদের ইসলাম ধর্মের। তাই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হাজী ও টুরিস্ট মক্কা ও মদীনায় গিয়ে থাকে। হজ্জ ও ওমরার যাত্রার পাশাপাশি অনেক পর্যটক সঠিকভাবে কীভবে এসকল যায়গা পরিদর্শন করবেন, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। হিজাজ হজ্জ ও ওমরা কাফেলা তাই এসকল বিষয়কে করেছে একেবারে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow