মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহ
মক্কা শহরে কালো গিলাফে আবৃত রয়েছে কা’বা ঘর। এ ঘরটির চারপাশে যে মসজিদ কমপ্লেক্স রয়েছে সেটিকে বলা হয় হারাম শরীফ বা মসজিদে হারাম। মসজিদটি নিয়ে মুসলিমদের কৌতুহলের শেষ নেই। অন্যতম কৌতুহল হল, এত বড় কমপ্লেক্সের মোট দরজা কতটি এবং এসব দরজার কী কোনো নাম রয়েছে, থাকলে নামগুলো কী? বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কৌতুহল দূর করতেই মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহ নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে এ ব্লগে।
মসজিদ অর্থ সিজদা দেওয়ার স্থান এবং হারাম অর্থ সম্মানিত। দুটি শব্দ মিলে অর্থ দাঁড়াচ্ছে সম্মানিত মসজিদ। পৃথিবীতে সব মসজিদই সম্মানিত। তবে মসজিদুল হারামের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন, এখানে রয়েছে আল্লাহর ঘর। এ ঘরটিই হল মুসলিমদের কিবলা এবং এর তাওয়াফের মাধ্যমেই শুরু হয় উমরাহ ও হজের কার্যক্রম। আসুন, এ লেখার মাধ্যমে মসজিদ হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাগুলো সম্পর্কে জেনে নেই এবং সমৃদ্ধ করি আমাদের জ্ঞানভান্ডার।
বায়তুল্লাহ শরীফ মক্কার গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহ
পবিত্র ঘর মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহ থেকে ৪৫টি দরজা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দরজাগুলোর বিবরণে নামকরণ, অবস্থান এবং এসব দরজা দিয়ে মসজিদের কোন অংশে সহজে যাতায়াত করা যায়, বিষয়গুলো উঠে এসেছে। উল্লেখযোগ্য ৪৫টি দরজা হল:
বাব মালিক যা কিং আব্দুল আজিজ গেট নামে পরিচিত। সৌদি আরবের সাবেক বাদশাহ আব্দুল আজিজের নামে এ গেটের নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদুল হারামের ইয়েমেনি কর্ণার বরাবর এবং আজিয়াদ স্ট্রিটের ঠিক বিপরীতে গেটটি অবস্থিত। বাব মালিক থেকে সরাসরি কা’বা দেখা যায়। এ দরজা দিয়ে প্রতিবন্ধী ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা সরাসরি মাতাফ বা তাওয়াফের স্থানে প্রবেশ করতে পারেন।
মসজিদুল হারামের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আজিয়াদের দুটি উপত্যকার নামে দরজাটির নামকরণ করা হয়েছে। দরজার পাশে রয়েছে বৈদ্যুতিক সিঁড়ি । এ সিঁড়ি ব্যবহার করে সহজেই হারাম কমপ্লেক্সের উপরে ওঠা যায়।
বিলাল ইবন রাবাহ (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবি এবং তাঁর মুয়াযযিন। মর্যাদাবান এ সাহাবির নামে বাব বিলাল বা বিলাল গেটের নামকরণ করা হয়েছে। হারাম কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিকে দরজাটি অবস্থিত।
মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের একটি বাব হুনাইন বা হুনাইন গেট। এটি বাব বিলাল ও ইসমাইলের মাঝে অবস্থিত। তায়েফ নিকটবর্তী হুনাইন শহরের নামে এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
আল্লাহর আদেশে আদিষ্ট হয়ে বাবা ইবরাহিম (আ.) এর সাথে বায়তুল্লাহ পুনঃনির্মাণ করেছেন ইসমাইল (আ.)। তাঁর সম্মানে হারাম কমপ্লেক্সের এ গেটের নাম রাখা হয়েছে বাব ইসমাইল বা ইসমাইল গেট। দরজাটি বাব হুনাইন ও হামযাহ এর মাঝে অবস্থিত।
মসজিদ হারামের প্রধান ৫টি দরজার একটি হল বাব সাফা বা আল সাফা গেট। সাফা পাহাড়ের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। দরজাটি মসজিদ কমপ্লেক্সের উত্তর দিকে অবস্থিত। এখান থেকে সরাসরি সাঈ করার স্থানে যাওয়া যায়। বয়স্ক ও অসুস্থ হাজিগণ এ গেট থেকে সাঈ করার জন্য গাড়ির সহযোগিতা নিয়ে থাকেন।
হামযাহ (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চাচা। উহুদ যুদ্ধে তিনি শহিদ হয়েছিলেন। তাঁকে শহিদদের সর্দার বলা হয়। তাঁর নামে এ দরজার নাম রাখা হয়েছে বাব হামযাহ। মসজিদুল হারামের ঠিক মাঝে অবস্থিত দরজাটি। বাইতুল্লায় প্রবেশের অন্যতম পয়েন্ট হল এ দরজা।
মক্কার কুবাইস পাহাড়মুখী দরজা হওয়ায় দরজাটির নাম রাখা বাব কুবাইস বা কুবাইস গেট। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, পৃথিবীতে আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম পাহাড় হল কুবাইস পাহাড়। কুবাইস ও সাফা পাহাড়ে যেতে চাইলে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নামে মসজিদে হারামের বাব নাবি বা আল নাবি গেটের নামকরণ করা হয়েছে। হারাম কমপ্লেক্সের পূর্বদিকে সাফা পাহাড়ের কাছে বাব কুবাইস ও আলীর মাঝে দরজাটি অবস্থিত।
মসজিদুল হারামের এ গেটটিও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ব্রিজটি কমপ্লেক্সের উপর তলার সঙ্গে যুক্ত। এ ব্রিজ দিয়ে মসজিদের উপর, সাফা পাহাড় ও সাফা এরিয়ায় যাতায়াত করা যায়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবা আরকাম বিন আবি আরকাম (রা.) এর বাসস্থান এখানে ছিল। এজন্য তাঁর নামে এ গেটের নামকরণ করা হয়েছে। গেটটি মাসআ’র (সায়ী করার স্থান) পূর্ব এবং বাব আলির ডানদিকে অবস্থিত। দরজাটি দিয়ে হাজিগণ সহজেই মাসআ’য় (সায়ী করার স্থান) যেতে পারেন।
মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের একটি হল বাব আলী/আলী গেট। রাসূল (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবা ও জামাতা আলী (রা.) এর নামে গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। বাব আলী মাসআ’র (সায়ী করার স্থান) পূর্বদিক এবং বাব নবি ও আব্বাসের মাঝে অবস্থিত। সায়ী করার সময় হাজিগণকে ‘রমল’ করতে হয়। দরজাটি ‘রমল’ করার স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত।
আব্বাস (রা.) হলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবা এবং চাচা। তাঁর নামে হারাম কমপ্লেক্সের ২০নং গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। গেটটি মসজিদ হারামের পূর্বদিকে বাব আলি ও বনি শায়বার মাঝে অবস্থিত। দরজাটি দিয়ে মাসআ’য় (সায়ী করার স্থান) প্রবেশ করা যায়।
মসজিদুল হারাম কমপ্লেক্সের অত্যাধুনিক গেটগুলোর একটি হল বাব বনি হাশেম গেট। মক্কার সম্ভ্রান্ত গোত্র বনু হাশেমের নামে নামকরণ করা হয়েছে দরজাটির। কালো গিলাফে আবৃত পবিত্র কা’বার কাছেই দরজাটি অবস্থিত। সায়ী করার জন্য দরজাটি দিয়ে যাতায়াত করা যায়।
১৫.শাইবা গেট/ বাব বনি শাইবা-(গেট নং-২২)
ইসলাম আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই মক্কার চাবি রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল বনু শায়বাহ গোত্র। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ গোত্রের হাতেই মক্কার চাবি তুলে দেন। এখনও শায়বাহ গোত্রের হাতেই মক্কার চাবির দাযিত্ব রয়েছে। গোত্রটির নামেই হারাম কমপ্লেক্সের ২২নং গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। মারওয়া পাহাড়ের কাছে এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দরজাটি অবস্থিত।
মক্কার প্রসিদ্ধ মারওয়া পাহাড়ের নামে এ গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। হারাম কমপ্লেক্সের বড় ও প্রধান দরজাগুলোর একটি হল বাব আল মারওয়া/মারওয়া গেট। এখানে রয়েছে বৈদ্যুতিক সিঁড়ি। সিঁড়িটি দিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় সায়ী করা এবং সায়ী শেষে ফেরত আসার জন্য যাতায়াত করা যায়। মসজিদুল হারামের উপরেও ওঠা যায় এ দরজা দিয়ে।
উসমানীয় শাসনামলে মসজিদুল হারামের উত্তরদিকে এবং বর্তমান ‘বাব সালাম’ এর পাশে গড়ে উঠেছিল মুদা’আ বাজার। বাজারটির নামেই এ গেটের নামকরণ করা হয়েছে। নিচ তলায় সায়ী সম্পন্ন করে হাজিগণ দরজাটি দিয়ে বেরিয়ে আসেন।
মক্কার অন্যতম প্রসিদ্ধ ও সম্ভ্রান্ত গোত্রের নাম হল কুরাইশ গোত্র। এ গোত্রেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্মগ্রহণ করেছেন। গোত্রটির নামেই মসজিদুল হারামের ২৬-২৭নং গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। সায়ী করার স্থানের উত্তরপ্রান্তে দরজাটি অবস্থিত এবং এটি দিয়ে মারওয়া পাহাড়ে প্রবেশ করা যায়।
মক্কার বিখ্যাত আরাফা ময়দান যেখানে হজের সময় হাজিগণ অবস্থান করেন। এ ময়দানের নামেই মসজিদ হারামের ৩৫নং গেটটির নামকরণ করা হয়েছে। মারওয়া পাহাড়ে এ গেটটি অবস্থিত।
মক্কার আরেকটি বিখ্যাত স্থানের নাম হল মুযদালিফা। হজের সময় এ স্থানেও হাজিগণকে অবস্থান করতে হয়। স্থানটির নামেই মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম বাব মুযদালিফার নামকরণ করা হয়েছে।
২১. ফাতাহ গেট-(গেট নং ৪৫)
ফাতাহ একটি আরবি শব্দ, অর্থ হল বিজয়। কয়েকটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন এ দিক দিয়ে কা’বায় প্রবেশ করেছিলেন। এজন্য ‘ফাতাহ’ নামে দরজাটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদ হারামের দক্ষিণ দিকে গেটটি অবস্থিত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহাবাদের একজন হলেন ওমর বিন খাত্তাব (রা.)। যে দশজন সাহাবা দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন তাঁদের একজন হলেন ওমর (রা.)। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এ সাহাবির নামেই বাব ওমর ফারুকের নামকরণ করা হয়েছে।
মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম হল বাব আল কুদস গেট। ফিলিস্তিনে অবস্থিত ইসলামের প্রথম ক্বিবলা ‘মসজিদুল আকসা’র নামে গেটটির নামকরণ করা হয়েছে।
মক্কা থেকে হিজরত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে শহরে গিয়েছিলেন তার নাম হল মদিনা। এ শহরের নামেই হারাম কমপ্লেক্সের ৫৬ গেটটির নামকরণ করা হয়েছে বাব মদিনা।
২৫. উমরা গেট-(গেট নং-৬৩)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনের শেষ ওমরা করার সময় এদিক দিয়ে কা’বায় প্রবেশ করেছিলেন। তাঁর উমরাহর কথা উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এ গেটের নাম রাখা হয়েছে বাব উমরা। গেটটি দিয়ে সরাসরি তাওয়াফ করার স্থানে প্রবেশ করা যায়।
প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মর্যাদাবান সাহাবাদের একজন হলেন আম্মার বিন ইয়াসির (রা.)। ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সাহাবার নামেই মসজিদ হারামের ৬৭নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
মুয়ায বিন জাবাল (রা.) ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী সাহাবি। জ্ঞানী এ সাহাবার নামে নামকরণ করা হয়েছে বাব মুয়ায বিন জাবালের। এটি মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের একটি।
আমর বিন আস (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান সাহাবি। বদর ও উহুদ যুদ্ধে তিনি ইসলামের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন। সর্বশেষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুদ্ধিমান এ সাহাবার নামে মসজিদুল হারাম কমপ্লেক্সের ৬৯নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বকনিষ্ঠ ও প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম হল আয়িশা বিনত্ আবি বকর (রা.)। তাঁর নামে মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম বাব আয়িশা বিনত্ আবি বকর-এর নামকরণ করা হয়েছে।
আবু বকর (রা.) এর মেয়ে, যুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) এর স্ত্রী এবং আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রা.) এর মা হলেন আসমা বিনত আবি বকর (রা.)। তাঁর নামেই মসজিদুর হারামের ৭১নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
৩১. আল ইয়ারমুক গেট-(গেট নং ৭৩)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাত পরবর্তী যে যুদ্ধে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জন হয়েছে সেটি হল ইয়ারমুকের যুদ্ধ। আবু বকর (রা.) এর শাসনামলের শেষ দিকে যুদ্ধটি হয়েছিল। এ যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এর বীরত্বে রোমানদের বিরুদ্ধে বিজয় পেয়েছিল মুসলিমরা। এ যুদ্ধের কথা স্মরণে রাখতেই মসজিদুল হারাম কমপ্লেক্সের ৭৩ নং গেটের নাম রাখা হয়েছে বাব আল ইয়ারমুক।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাহাবা ও হিজরতের সঙ্গী হলেন আবু বকর (রা.)। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যাকে মুসলিম জাহানের প্রধান খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছেন তিনিও হলেন আবু বকর (রা.)। মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে আবু বকর (রা.) এর নামেই।
৩৩. বাদশাহ ফাহাদ গেট-(গেট নং ৭৯)
মসজিদ হারাম কমপ্লেক্সের থ্রি পোর্টাল গেটগুলোর একটি হল বাব আল ফাহাদ গেট। সৌদি আরবের সাবেক বাদশাহ ফাহাদের নামে এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে। দরজাটি মসজিদের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। মসজিদের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে আগত মুসল্লি ও হাজিগণ ইবাদত, তাওয়াফ ও সায়ী করার জন্য এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করে থাকেন।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.), মাত্র ৭বছর বয়সে যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। মদিনায় সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী সাহাবিও হলেন তিনি। তাঁর নামেই হারাম কমপ্লেক্সের এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
সোঈদ বিন যায়েদ (রা.) ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবি। তিনি ওমর ফারুক (রা.) চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি। উমর বিন খাত্তাব (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিক উল্লেখযোগ্য। মর্যাদাবান এ সাহাবার নামে মসজিদ আল হারামের ৮৫নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
কুরআন সংকলনের কাজে যার অবদান উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন যায়েদ বিন সাবিত (রা.)। আবু বকর (রা.) এর খেলাফতের সময় কুরআন সংকলনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গুরুত্বপূর্ণ এ সাহাবার নামেই মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
উম্মে হানি (রা.) হলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চাচাতো বোন এবং আবু তালিবের মেয়ে। জাফর ও আলী বিন আবি তালিব (রা.) এর বড় বোন। সম্মানিত এ নারী সাহাবিয়্যার নামেই হারাম কমপ্লেক্সের ৮৭নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ছিলেন মাইমুনা (রা.)। তাঁর নামেই মসজিদুল হারামের ৮৮নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
হিজলাহ মক্কার একটি পাহাড়ের নাম। ধারণা করা হয় এ পাহাড়ের নামেই হারাম কমপ্লেক্সের ৮৯নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে দরজাটি আংশিকভাবে দৃশ্যমান। এ দরজার ঠিক ডান দিকেই অবস্থিত বাব হাফসা।
ওমর ফারুক (রা.) এর মেয়ে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রী হাফসা বিনত্ উমর (রা.) এর নামে এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে দরজাটি আংশিকভাবে দৃশ্যমান।
দারুন নাদওয়া হল মক্কার ঐতিহাসিক ঘরের নাম যেখানে বসে কুরাইশ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করতেন। এ ঘরের নামে মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রথম স্ত্রী এবং সুখ দুঃখের সঙ্গিনী ছিলেন খাদিজা (রা.)। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সবসময় যারা আগলে রাখতেন, তাঁদের অন্যতম খাদিজা (রা.)। পুণ্যবান এ নারীর নামেই হারামের ৯৩নং গেটের নামকরণ করা হয়েছে।
নুহ (আ.) এর বন্যায় বালুর নিচে চাপা পড়ে যাওয়ার পর আল্লাহ নির্দেশে সন্তানকে সাথে নিয়ে বায়তুল্লাহ পুনঃনির্মাণ করেছিলেন ইবরাহিম (আ.)। ৪হাজার বছর আগের ইবরাহিম (আ.) এর স্মৃতি ও অবদানকে স্মরণ করতেই তাঁর নামে এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
৪৪. বাদশাহ আব্দুল্লাহ গেট-(গেট নং ১০০)
আব্দুল্লাহ ছিলেন সৌদি আরবের সাবেক বাদশাহ। তাঁর নামেই মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহের অন্যতম এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে। এটি হারাম কমপ্লেক্সের বড় দরজাগুলোরও একটি। দরজাটি মসজিদ কমপ্লেক্সের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। দরজার সাথে লাগোয়া করিডোর দিয়ে মাতাফে (তওয়াফ করার স্থান) যাওয়া যায়।
সালাম আরবি শব্দ। এর অর্থ শান্তি। হারাম কমপ্লেক্সের একটি দরজার নাম-ই- রাখা হয়েছে ‘বাব সালাম’ বা শান্তির দরজা। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে এ গেটটি অবস্থিত। অনেকেই এ দরজাকে বাব বনি শায়বা বলে থাকে। যদিও বনি শায়বা মসজিদ কমপ্লেক্সে পৃথক একটি দরজা রয়েছে।
শেষ কথা
হিজাজ হজ ও উমরাহ কাফেলা বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত উমরাহ ট্রাভেল-অ্যাজেন্সি। ভিসা প্রসেস ও বিমান টিকেট ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে নির্বিঘ্নে উমরাহ পালন করানো পর্যন্ত হাজি সাহেবদের উমরাহকেন্দ্রিক সব রকমের সেবা দিয়ে থাকে এ অ্যাজেন্সি। আপনি কী ব্লগে উল্লেখিত মসজিদ আল হারামের গুরুত্বপূর্ণ দরজাসমূহ দেখতে, সহজ ও শুদ্ধভাবে উমরাহ পালন করতে চাচ্ছেন? তাহলে আজই কল করুন অ্যাজেন্সির হটলাইন নাম্বারে।