তাওয়াফের পূর্বে মহিলাদের করণীয়

তাওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে মহিলার কী করণীয়?

তওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে সাঈ করে নিবে। সাঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত জরুরী নয় এবং সাঈর স্থানও মসজিদের মধ্যে গণ্য নয়। তাই সে সেখানে অবস্থান ও অপেক্ষাও করতে পারে। [ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন, ২/২৩৯]

বর্তমানে মহিলাদের মাসিক সাময়িক আটকে দেয়া বা পিছিয়ে দেয়ার নিরাপদ চিকিৎসা ও ঔষধ রয়েছে। বিশ^স্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উমরার জন্য পরিকল্পনা নেয়া দিনগুলোতে মাসিক আটকে দেয়া বা পিছিয়ে দেয়া বৈধ হবে। [ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন, ২/১৮৫]

তাওয়াফে হাজীদের সাধারণত কী কী ভুলত্রুটি লক্ষ্য করা যায়?

  • হাজারু আসওয়াদের কাছে এসে দু’হাতে ইশারা করা। এটা ভুল। শুদ্ধ হলো এক হাতে দেয়া।
  • রুকনু ইয়ামানী চুম্বন করা বা হাত দিয়ে ইশারা করা। এটা করা ঠিক নয়। শুদ্ধ হলো হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
  • কিছু লোক তাওয়াফের সময় কাবার চার কোণই স্পর্শ করে। এরূপ করতে যাওয়া ঠিক না।
  • তাওয়াফের সময় কেউ কেউ কাবাঘর বা এর গেলাফ মুছে। এ মুছার মধ্যে কোন ফজিলত নেই।
  • কেউ কেউ মাকামে ইবরাহিমকে চুমু দেয় এবং এটাতে হাত দিয়ে মুছে। এসব ভুল কাজ।

তাওয়াফের শর্ত কয়টি ও কী কী?

তাওয়াফের শর্ত ৩টি।

  • নিয়ত করা;
  • তাওয়াফের ৭ চক্কর পূর্ণ করা;
  • মসজিদে হারামের ভিতরে থেকে কাবার চারপাশে তাওয়াফ করা।
তাওয়াফের ওয়াজিব

তাওয়াফের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?

তাওয়াফের ওয়াজিব ৫টি।

  • অযূ করা;
  • সতর ঢাকা;
  • হাজরে আসওয়াদকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ করা;
  • বায়তুল্লাহর সম্পূর্ণ অংশকে (হাতিমসহ) ঘিরে তাওয়াফ করা;
  • তাওয়াফের পর দু’রাকআত সালাত আদায় করা।

তাওয়াফের সময় কি বলবেন?

তাওয়াফের সময় রুকনু ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝে নিম্নোক্ত দোয়াগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত হয়েছে।

  • ‘হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথরের) কাছে যাওয়া, ‘‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’’ (بسم الله الله أكبر) বলে তাওয়ার্ফ শুরু করা।
  • রুকনু ইয়ামানী ও হাজরু আসওয়াদের মাঝে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া। আব্দুল্লাহ ইবন সাঈদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত

    رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

    “তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)—কে দুই রুকনের মাঝখানে বলতে শুনেছি ’’হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন, আখিরাতের কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন (আল—কুরআন, সূরা আল—বাকারাহ: ২০১)। [আবূ দাউদ, আস—সুনান, ১৮৯২]

  • হাজারে আসওয়াদ অতিক্রমকালে তাকবীর (بسم الله الله أكبر) দেয়া ছাড়া। [বুখারী, আস—সহীহ, ৪৯৮৭]
  • তাওয়াফে যিকির, দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াত যে কোনটা করার এখতিয়ার রয়েছে।
  • তাওয়াফের ৭ চক্র শেষ হলে ‘মাকামু ইবরাহীম’—এর কাছে গিয়ে পড়বে,

    وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً

    “ইবরাহীমের দন্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো (আল—কুরআন, সূরা বাকারাহ: ১২৫)। [তিরমিজী, আস—সুনান, ২৯৬৭]

তাওয়াফের মধ্যে দোয়া করা, বেশি বেশি আল্লাহ্র যিকির করা মুস্তাহাব। কেননা যিকির সর্বাবস্থায় মুস্তাহাব। আর এই ইবাদত পালনকালে সেটি আরও বেশি উত্তম। এ সময় আল্লাহ্র যিকির কিংবা কুরআন তেলাওয়াত কিংবা সৎ কাজের আদেশ কিংবা অসৎ কাজের নিষেধ কিংবা যা না হলে নয় এমন কিছু ছাড়া অন্য কোন কথাবার্তা না—বলা মুস্তাহাব। [ইবন কুদামা ‘আল—মুগনী, ৩/১৮৭]

তাওয়াফ বা সাঈতে থাকা অবস্থায় নামাযের ইকামত হয়ে গেলে কী করণীয়?

তাওয়াফ বা সাঈকালে নামাযের ইকামত হয়ে গেলে তাওয়াফ ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে সালাতে যোগদান করতে হবে। তারপর অবশিষ্ট তাওয়াফ পূর্ণ করতে হবে। শুরু থেকে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে না।

শাইখ বিন বায (র.) বলেন,

যদি কোন প্রয়োজনে তাওয়াফ স্থগিত করে; যেমন কোন ব্যক্তি তিন চক্কর তাওয়াফ করার পর সালাতের ইকামত হয়ে গেলো, তাহলে তিনি সালাতের আদায় করবেন। এরপর ফিরে এসে তিনি যেখানে ছিলেন সেই স্থান থেকে তাওয়াফ করবেন; তাকে হাজারে আসওয়াদে ফেরত যেতে হবে না। বরং তিনি তার স্থান থেকে শুরু করবেন এবং তাওয়াফ পরিপূর্ণ করবেন। তবে কিছু আলেম এর বিপরীত বলেছেন যে, হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করতে হবে। সঠিক অভিমত হলো হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করা আবশ্যক নয়; যেমনটি বলেছেন একদল আলেমে দ্বীন। অনুরূপভাবে যদি জানাযার সালাত পড়ার জন্য কোন লাশ আনা হয় কিংবা কোন ব্যক্তি যদি কথা বলার জন্য তাকে থামিয়ে দেয় কিংবা ভীড় ঘটে কিংবা অন্য এমন যে কোন কিছু ঘটে। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি তার অবশিষ্ট তাওয়াফ পরিপূর্ণ করবেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। [মাজমুউ ফাতাওয়াশ শাইখ বিন বায, ১৭/২১৬]

তাওয়াফে নামাযের ইকামত হয়ে গেলে করণীয়

শাইখ বিন বায আরও বলেন, যদি কেউ তাওয়াফে বা সাঈতে থাকা অবস্থায় সালাতের ইকামত হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি সবার সাথে সালাত পড়বেন; এরপর তাওয়াফ ও সাঈ যে পর্যন্ত শেষ করেছেন তার পর থেকে পরিপূর্ণ করবেন। [ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ২/২৫০]

শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহ.) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি উমরার তাওয়াফ বা হজ্জের তাওয়াফ বা নফল তাওয়াফে থাকা অবস্থায় সালাতের ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সে ব্যক্তি তাওয়াফ ছেড়ে দিয়ে সালাত পড়বে। এরপর ফিরে এসে অবশিষ্ট তাওয়াফ পরিপূর্ণ করবে; নতুনভাবে শুরু করবে না। আগে যে স্থান পর্যন্ত শেষ করেছেন, সেখান তাওয়াফ পরিপূর্ণ করবেন। সংশ্লিষ্ট চক্করটি পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নেই। কেননা পূর্বের কৃত আমলটি সঠিক ভিত্তির উপর এবং শরিয়তের অনুমতিক্রমে আদায় হয়েছে। অতএব শরিয়তের দলিল ছাড়া সেটি বাতিল হতে পারে না। [ফাতাওয়া আরকানুল ইসালাম, ৫৩৯]

তাওয়াফ ও সাঈর মাঝে সময়ের ব্যবধান কতটুকু হতে পারে তা কি নির্দিষ্ট?

তাওয়াফ ও সাঈর মাঝে সময়ের ব্যবধান কতটুকু হতে পারে সেটি নির্দিষ্ট নয়। এ দুটো আমলের মাঝে পরম্পরা শর্ত নয়। কিন্তু তাওয়াফের পরপরই সাঈ করা উত্তম এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা নবীজি (সা.) সাঈ ও তাওয়াফের মধ্যে পরম্পরা রক্ষা করেছেন। তবে কেউ যদি দিনের প্রথমাংশে তাওয়াফ করে, আর শেষাংশে সাঈ করে কিংবা একদিন বা দুইদিন পর সাঈ করে; এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা তাওয়াফ ও সাঈর মাঝে পরম্পরা রক্ষা করা ওয়াজিব নয়। [ইবন উসাইমিন, মাজমুউ ফাতাওয়া, ২২/৪২১]

তাওয়াফের একটি চক্কর ভুলে বাদ পড়লে করণীয় কী?

যদি কোন হাজীসাহেব ফরয তাওয়াফ করাকালে কোন একটি চক্করের কথা ভুলে যান এবং মাঝখানে দীর্ঘ বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে সেই ব্যক্তি পুনরায় তাওয়াফ করবেন। আর যদি বিচ্ছেদের সময় সামান্য হয় তাহলে তিনি ভুলে যাওয়া চক্করটি আদায় করলে হয়ে যাবে।

তাওয়াফ শেষে আর কী কী কাজ সুন্নাত আছে?

তাওয়াফ শেষে ধারাবাহিক কয়েকটি কাজ সুন্নাত:

  • যমযম পান করা;
  • যমযমের কিছু পানি মাথায় ঢেলে দেয়া;
  • সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা;
  • সাফা—মারওয়ায় সাঈ করতে চলে যাওয়া।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow
script src="https://code.jquery.com/jquery-3.6.0.min.js">